কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া উচিত
ড. আকবর আলি খান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে এই মুহূর্তে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া উচিত। কোনো দেশেই অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু রাখার নিয়ম নেই। কোটার কারণে দেশের মেধাবীরা আজ বিপন্ন। কোটা বন্ধ হলে অনেক মেধাবীই চাকরি পাবে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দ্য প্রেজেন্ট সিভিল সার্ভিস সিস্টেম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশের ক্যাডার নিয়োগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোটা সিস্টেম। এর কারণে মেধাবীরা চাকরি পাচ্ছে না। কোটাকে অনেকে খারাপ, ভালো নয়, বাদ দেওয়া উচিত এ রকম বললেও এর বেশি কিছু বলেন না। পাবলিক সার্ভিস কমিশনে ২৫৭টি কোটা রয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন উদ্ভট সিস্টেম নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে কোটা চালু হয়েছে দরিদ্রদের ওপরে তুলে নিয়ে আসার জন্য, কাউকে পুরস্কৃত করার জন্য নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা সিস্টেম চালু হয়েছিল, কারণ তাদের অবস্থা তখন খারাপ ছিল। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধার নামে যে কোটা দেওয়া হয় তা নিতান্তই অমূলক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পদ্ধতিতে অসঙ্গতি রয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন চায় সব পদের জন্য একই পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ হবে। এটি একটি উদ্ভট ধারণা। এর মাধ্যমে সঠিক ক্যাডার পাওয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে যতই বলা হোক না কেন, সরকার এতে কর্ণপাত করবে না। ক্যাডার নিয়োগ নিয়েও চিন্তাভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। পজিশন বেইজড পদে যোগ্যতম ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু পদে নেতৃত্বের গুণাবলির ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া উচিত। বাকি সব পদে পজিশনভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে এ রকম বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
কোটা নিয়ে কিছু মন্তব্্য: কোটা পদ্ধতিকে ড. আকবর আলী খানের ‘উদ্ভট’ বলাকে সমর্থন জানিয়ে পাঠক মতামতে রাইহানুল হক লিখেছেন, ‘তিনি (আকবর আলী খান) একেবারে ঠিক কথা বলেছেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে কোটা রাখতে হবে, যেমন প্রতিবন্ধীদের জন্য।’ আমিনুল শিমুল লিখেছেন, ‘কোটা পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যমান, তবে কোথাও এটা চিরস্থায়ী নয়----’। আদিল আল সাজিন লেখেন, ‘৫৬ শতাংশ কোটা তরুণদের স্বপ্নভঙ্গের জন্য যথেষ্ট। আর অনেক কোটাধারীরা স্বল্প মেধাবী হয়েও সরকারি চাকরির বাজারে সবার চেয়ে এগিয়ে!’ সোহেল আহমেদ কোটাব্যবস্থাকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, সারাদেশের তরুণদের জন্য ৪৫ শতাংশ চাকরি আর কয়েক হাজারের জন্য ৫৫ শতাংশ চাকরির ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়’। শাহাদাত শাকিল লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করা হোক। যোগ্যতার বলে চাকরি নিক। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। তাহলে কেন এই পদ্ধতি বাতিল হবে না?’ মোহাম্মদ সোহেল লিখেছেন ‘কোটা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োজন ছিল কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৪ যুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ৫৬ শতাংশ কোটা থাকা সঠিক বলে মনে করি না। কিছু কিছু কোটা থাকতে পারে, তবে তা ১৫ শতাংশের বেশি নয়।’ সাজ্জাদ হোসেইন মেহেদি লিখেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁরা রাষ্ট্র থেকে সুযোগ-সুবিধা পেতেই পারেন। তাই বলে তাঁদের নাতি-নাতনিদের কোটায় চাকরি দিতে হবে এটা কেমন কথা!’ সাহেব উদ্দিনের মতে- ‘যদি কখনো কোটা প্রথা উঠে যায় সেটা হবে নতুন বাংলাদেশ। এ দেশের মেধাবীরা তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে’। ড. আকবর আলী খানের বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে আরো অসংখ্য শিক্ষার্থী-তরুণ-তরুণী বক্তব্য-মন্তব্য দিয়েছেন।
ReplyDeleteশুধু কি সরকারি চাকরি! স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও কোটা পদ্ধতি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। সে কারণে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ভাল ফলাফল করেও স্কুল-কলেজ-পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেন না। অথচ কোটা পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে কম মেধাবী এমনকি ভর্তি হওয়ার অযোগ্য ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হচ্ছেন। স্বাধীন দেশে এই কোটা পদ্ধতি আর কতদিন চলবে কে জানে? সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক যৌথ ভাবে দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম-ঢাকা-রাজশাহী-জাহাঙ্গীরনগর-ব্র্যাক-নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উপর এক জরীপ করেছেন। জরীপের পর তারা বলেছেন ছাত্রছাত্রীরা অধিকাংশই বিষন্নতায় ভোগেন। এর মূল কারণ লেখাপড়া শেষ করে চাকরির অনিশ্চয়তা। যে তরুণ-তরুণীদের বলা হয় ‘আগামীর স্বপ্ন’ কোটা পদ্ধতির কারণে চাকরি নামের সোনার হরিণের জন্য তাদের আর কতদিন অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে? যোগ্যতার মাফকাঠিতে চাকরি এই নিশ্চয়তা পেলে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়য়া ছাত্রছাত্রীদের আর হতাশায় ভুগতে হবে না।